স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম

ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম 2024 । প্রেসার কত থাকলে বুঝবেন হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন

অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং বংশে উচ্চরক্ত চাপের ইতিহাস থাকলে আজই সতর্ক হউন –ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন একটি অতি পরিচিত রোগ। সময়মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করা হলে, উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তারা সেই সম্পর্কে অবগত থাকেন না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এ ছাড়াও সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সহজেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ কি কি?  সাধারণত হাই প্রেসার এর বিশেষ কোনো লক্ষণ থাকে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা বোঝার উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ মাপার ক্ষেত্রে রক্ত মাপার যন্ত্র দ্বারা দুইটি সংখ্যা রেকর্ড করা হয়— সিস্টোলিক প্রেসার বা চাপ: দুটি রিডিং এর মধ্যে বড় সংখ্যা বা ওপরের মানটি হলো সিস্টোলিক চাপ। হৃৎপিণ্ড থেকে প্রতি স্পন্দনে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সময়ে এই চাপ সৃষ্টি হয়। ডায়াস্টোলিক প্রেসার বা চাপ: রিডিং দুটির মধ্যে ছোট সংখ্যা বা নিচের মানটি হলো ডায়াস্টোলিক চাপ। রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে রক্তনালীর বাধা থেকে এই চাপের সৃষ্টি।

রক্তচাপকে মিলিমিটার (পারদ) বা mmHg এককে মাপা হয়। ধরে নেওয়া যাক আপনার রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার (পারদ)। তাহলে সিস্টোলিক চাপ হবে ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক চাপ হবে ৮০। মানুষের রক্তচাপ একে অপরের থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। একজনের জন্য যেই রক্তচাপ বেশি বা কম, তা অন্যজনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে পারে। রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০—এই সীমার মধ্যে থাকে তাহলে তা স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বলা হয় যদি-রক্তচাপ সবসময় ১৪০/৯০ বা এর বেশি থাকে। ৮০ বছর বা তার অধিক বয়সীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ যদি ১৫০/৯০ বা এর বেশি থাকে।
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কারণটি সবসময় চিহ্নিত করা যায় না। তবে বিভিন্ন কারণে এই সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া। খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা। অতিরিক্ত পরিমাণে মদপান করা। অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় ও অন্যান্য ক্যাফেইন-জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকা।

পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা। ধূমপান করা। রাতে একটানা ৬-৮ ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমানো। বয়স পঁয়ষট্টি বছরের ঊর্ধ্বে হওয়া। পরিবারে বাবা, মা, ভাই-বোনের মত নিকট আত্মীয়দের হাই ব্লাড প্রেশার থাকা।

প্রেসার মাপার নিয়ম কি?  সাধারণত চল্লিশোর্ধ সুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি ৫ বছরে অন্তত এক বার রক্তচাপ মেপে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত। রক্তচাপ পর্যবেক্ষণে রাখার মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। রক্তচাপ মেপে দেখার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। বাসায় কিভাবে রক্তচাপ মাপবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কি না কীভাবে বুঝবেন আর্টিকেলটি পড়ুন।

Caption: Check Reference

ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম 2024 । প্রেসার মাপার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

  1. শান্ত এবং স্থির অবস্থায় বসে থাকুন। যদি সম্ভব হয়, কমপক্ষে 5 মিনিটের জন্য আরাম নিন আপনার বিশ্রামের পরে প্রেসার মাপতে।
  2. ব্লাড প্রেসার মাপার জন্য উপযুক্ত প্রেসার মাপন উপকরণ ব্যবহার করুন। আপনার প্রেসার মাপনের উপকরণ সঠিকভাবে ক্যালিব্রেট করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশে রাখা হয়েছে এমন নিশ্চিত করুন।
  3. উপকরণটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে নির্দেশনা অনুসরণ করুন। যদি আপনি ব্লাড প্রেসার মাপতে নতুন হন বা কোনও নির্দেশনার জন্য অপরিচিত হন, তবে আপনার চিকিত্সকের বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ নিন।
  4. ধৈর্য সাধারো করুন: ব্লাড প্রেসার মাপার আগে ধৈর্য এবং স্থিরতা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর আরামদায়ক অবস্থায় বসে থাকুন। সম্ভব হলে শান্ত ও মনঃস্থির জায়গায় প্রেসার মাপুন। সাধারণত প্রথম 5 মিনিট অবস্থানের পরে মাপার নষ্ট হয়ে যায় এমন ফলে ধৈর্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
  5. উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন: প্রেসার মাপার জন্য একটি শান্ত ও পরিবেশ তৈরি করুন। লাইট সাউন্ড ও কম প্রশ্ন করা থেকে নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনার মাপটি সঠিকভাবে হয়। ব্লাড প্রেসার মাপার জন্য শান্তি এবং বিশ্রামপূর্ণ স্থান পরিবেশিত করুন।

উচ্চ রক্তচাপ হতে কি কি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন?

রক্তচাপ ১২০/৮০ থেকে ১৪০/৯০— এর মাঝে থাকলে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই ঝুঁকি রয়ে যায়, এমনকি তা দিন দিন বাড়তে থাকে। রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অত্যধিক বেড়ে গেলে তা রোগীর রক্তনালী, হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি ও চোখের মত অঙ্গে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। রক্তচাপ একটানা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী কিছু রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন—

  • হৃদরোগ।
  • হার্ট অ্যাটাক।
  • স্ট্রোক।
  • হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure)।
  • কিডনির সমস্যা।

পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া (Peripheral Artery Disease)। ফলস্বরূপ গ্যাংগ্রিন বা পচা ঘা হতে পারে। অ্যাওর্টা নামক দেহের বৃহত্তম ধমনীর রোগ (Aortic Aneurysms)।  মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট ডিমেনশিয়া (Vascular Dementia) । রক্তচাপ যৎসামান্য কমানোর মাধ্যমেও এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি?

নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই ঝুঁকি রয়ে যায়, এমনকি তা দিন দিন বাড়তে থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাক্তাররা দুটি পথ অবলম্বনের পরামর্শ দেন। প্রথমে জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনার উপদেশ দেওয়া হয়। এভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না আসলে সুস্থ জীবনধারা মেনে চলার পাশাপাশি ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে রোগ নির্ণয়ের সময়ে যদি প্রেসার অনেক বেশি থাকে তাহলে শুরুতেই জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনলে তা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকলে সেটিও নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জানতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর এবং ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি কি? আপনি  (১). যদি আপনার ব্লাড প্রেসার, স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশি থাকে সেক্ষেত্রে। Tab.Indever 10mg. ১+১+১ অথবা ২+২+২ এই নিয়মে খেতে পারেন। (২). যদি আপনার ব্লাড প্রেসার, স্বাভাবিকের তুলনায় মোটামুটি বেশি থাকে সেক্ষেত্রে। Tab.Olmedip 5/20mg. ০+০+১ এই নিয়মে খেতে পারেন। (৩). যদি আপনার ব্লাড প্রেসার, স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি থাকে। Tab.Olmedip 5/40mg. ০+০+১
Tab.Epnil 0.5mg. ০+০+১ এই নিয়মে এগুলো খেতে পারেন। যদি অস্বাভাবিক উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থেকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিকটস্থ হসপিটালে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *