স্ত্রীকে স্বামীর ভরণপোষণ আইন । স্ত্রী কখন ভরণপোষণ পাবে না?
বাধ্য স্ত্রীকে স্বামী ভরণপোষণ করবে এটাই নিয়ম- কিন্তু স্ত্রী যদি অবাধ্য হয়ে থাকে তবে স্বামী ভরণ নাও করতে পারে – স্ত্রীকে স্বামীর ভরণপোষণ আইন
ভরণ-পোষণ (Maintenance): (১) কোন স্বামী তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত ভরণ-পোষণ বা খোরপোষ দানে ব্যর্থ হলে বা একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে তাহাদিগকে সমভাবে খোরপোষ না দিলে, স্ত্রী বা স্ত্রীগণ কেহ, অন্য কোন আইনানুগ প্রতিকার প্রার্থনা ছাড়াও চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করতে পারেন। এইক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং ঐ পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ বাবদ প্রদানের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সার্টিফিকেট জারী (ইস্যু) করতে পারবেন। (২) কোন স্বামী বা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান পূর্বক ঐ ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট খানা পুর্নবিবেচনা জন্য সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে এই সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। (৩) উপরের (১) অথবা (২) উপ-ধারা মোতাবেক দেয় কোন টাকা যথাসময়ে বা সময়মত পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব হিসাবে আদায় করা চলবে।
ভরণপোষণের শর্ত কি? স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীও ভরণপোষণ পেতে হকদার। স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে অভ্যাসগতভাবে খারাপ ব্যবহার করে, গৃহত্যাগের নির্দেশ দেয়, তাড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে থাকে অথবা তাদের মধ্যকার আচার-আচরণ এরূপ পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এটা নিরসন করা সম্ভব নয় বা স্বামীর গৃহে থাকলে আরও অসুবিধা এবং বিরোধের জন্ম দিবে, সে অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস না করেও খোরপোষ দাবি করতে পারে। স্ত্রী তার আশু দেনমোহর দাবি করলে উক্ত দেনমোহর স্বামী পরিশোধ না করলে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে পৃথক বসবাস করতে থাকলেও স্বামী তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে।
ভরণপোষণ পরিশোধের নিয়ম কি? মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৯ ধারার বিধান অনুসারে সালিশী পরিষদ (চেয়ারম্যান/মেয়র) স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে উপযুক্ত খোরপোষ উল্লে¬খ করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে। বিবাহ যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিনই স্বামী খোরপোষ দিতে বাধ্য থাকবে। খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় সালিশী পরিষদ স্ত্রীর পরিবারের সামাজিক পদমর্যাদা, স্বামীর উপার্জন এবং অন্যান্য বিষয়াবলিও বিবেচনা করে খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করবে। স্ত্রীকে এমন পরিমাণ খোরপোষ মঞ্জুর করতে হবে যা দ্বারা স্ত্রী ঠিকমত জীবনযাপন করতে পারে।
তবে কোন স্ত্রী যদি তাহার সহিত সহ-অবস্থানে এবং স্ত্রীর কর্তব্য পালনে সুনির্দিষ্ট এবং বৈধ কারণ ব্যতিতই অস্বীকার করে সেইক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ভরনপোষণ দিতে বাধ্য নয়। (১৪ ডিএলআর, ৪১৫)।
চলুন ভরণ-পোষণ আইন দেখে নিই / একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে ভরণপোষণ নিয়ম কি?
নিকাহনামা বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকলে, দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য (দেয়) বলে ধরে নিতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, ১৯৬১
স্বামীর অবাধ্য হলে কি ভরণপোষণ পাবেন না? স্ত্রী কখন ভরণপোষণ পাবে না-
- স্ত্রী স্বামীর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও যেখানে স্বামী অবস্থান করে সেখানে ভিন্ন অন্যত্র বসবাস করলে।
- স্ত্রী বন্দিদশায় থাকলে। তবে স্বামী বন্দিদশায় থাকলে স্ত্রী ভরণপোষন হতে বঞ্চিত হবে না।
- স্ত্রী অন্যায়ভাবে অবাধ্য হয়ে স্বামীর অনুমতি ছাড়া অসংগত কারণে স্বামীর গৃহ ত্যাগ করলে।
- স্ত্রী ধর্মত্যাগ করলে।
- স্ত্রীর অবাধ্যাচারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে।
- স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনরত থাকলে; তবে শর্ত হলো যে, বিধবা অন্তঃসত্তা হলে গর্ব খালাস না অবধি খোরপোষ পাবে।
- স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে।
- স্বামী যতই গরীব হোক না কেন, তাতে স্ত্রীর অধিকার নষ্ট হয় না। স্ত্রীর খোরপোষ স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্বামীর এ দায়িত্ব ব্যক্তিগত। তবে স্ত্রীর খোরপোষ বা ভরণপোষন শর্তসাপেক্ষে।
অবাধ্য হলে কি ভরণপোষণ পাওয়া যাবে না?
স্ত্রী যতদিন তার স্বামীর আস্থাভাজন থাকবে ও স্বামীর ন্যায় সঙ্গত আদেশ পালন করবে,ততদিন স্বামী স্ত্রীকে ভরনপোষন দিবে।কিন্তু যে স্ত্রী স্বামীর সাথে যৌনমিলন অস্বীকার করবে অথবা অন্য কোন প্রকার স্বামীর অবাধ্য হবে সে স্ত্রীকে ভরণপোষন দিতে স্বামী বাধ্য থাকবে না। (মিতা খান বনাম হেমায়েত বিবি, ১৪ ডিএলআর (হাইকোর্ট), পৃষ্ঠা-৪৫৫)।তবে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে স্ত্রী আলাদা বসবাস করলে স্বামী ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।(মোঃ ইব্রাহিম হোসেন সরকার বনাম মোসা. সোলেমান্নেসা (১৯৬৭, ১৯ ডি এল আর পৃষ্ঠা ৭৫১)।