আলোচনার টেবিল ছেড়ে রাজপথে ‘জুলাই সনদ’: ঐকমত্যহীনতায় জটিল হচ্ছে নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়া
ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০২৫: ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐকমত্যহীনতা এখন সংসদের আলোচনা কক্ষ ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির আনুষ্ঠানিকতা পেরিয়ে রাজপথে এসে পড়েছে। সরকার বৃহস্পতিবারের (১৩ নভেম্বর) মধ্যেই নিজ উদ্যোগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর অনমনীয় অবস্থানে দেশ এক গভীর সাংবিধানিক ও নির্বাচনী সংকটের দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আলোচনা ব্যর্থ, সরকার নিচ্ছে নিজস্ব উদ্যোগ
জুলাই বিপ্লবের পটভূমিতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর ২৫টি রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরিত হয়েছিল ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। কিন্তু সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিশেষত গণভোট আয়োজনের পদ্ধতি ও সময়সীমা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে চরম মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, সরকার গত ৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের মধ্যেকার মতপার্থক্য মিটিয়ে সনদের বিষয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সময়সীমা শেষ হলেও দলগুলো কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ঐকমত্যের অপেক্ষায় না থেকে সরকার আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) নিজ উদ্যোগে সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
রাজপথে দ্বিমুখী চাপ: গণভোট চাই বনাম নির্বাচন মুখ্য
আলোচনার টেবিলে সমাধান না হওয়ায়, এখন সনদের বিষয়টি নিয়ে রাজপথে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের কর্মসূচি লক্ষ্য করা যাচ্ছে:
- সংবিধান সংস্কারপন্থীদের হুঁশিয়ারি: আট ইসলামী দলসহ জুলাই বিপ্লবপন্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। তারা ঘোষণা করেছে, গণভোট ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং ১৩ নভেম্বর বাকশালপন্থীদের রাজপথে প্রতিহত করা হবে। তাদের দাবি, জুলাই সনদ যেন কাগুজে দলিলে পরিণত না হয়।
- বিএনপির অবস্থান: অন্যদিকে, বিএনপির মতো সনদে স্বাক্ষরকারী বৃহৎ একটি দল সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে দলগুলোর ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ করা হয়নি, যা চুক্তির ব্যত্যয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “জাতি নির্বাচনের মাঠে, সনদ বাস্তবায়নের দাবি কেন রাজপথে?” বিএনপি এই মুহূর্তে নির্বাচনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছে এবং যেকোনো আলোচনার জন্য সরকারের আনুষ্ঠানিক আহ্বানের অপেক্ষায় আছে।
বিশ্লেষকদের উদ্বেগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলগুলো জুলাই সনদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, “দলগুলো জুলাই সনদকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। বল এখন সরকারের কোর্টে।” তিনি মনে করেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা কঠিন হবে।


