নাগরিক সেবা

ই-নামজারি করার নিয়ম ২০২৪ । খারিজ অনলাইনে কি কি কাগজপত্র আপলোড করতে হয়?

এখন নামজারি ব্যতীত জমি ক্রয় ও বিক্রয় করা যায় না-জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে খারিজ বা মিউটেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে– ই- নামজারি করার নিয়ম ২০২৪

মিউটেশন কি অনলাইনেই করা যাবে? ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (a2i) প্রোগ্রাম ও ভূমি সংক্ষার বোর্ডের উদ্যোগে ভূমি সংক্রান্ত সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় স্বল্প সময়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সকল উপজেলা ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু করা হয়েছে। খুব সহজে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি আপলোড করে অনলাইনে ই-নামজারি (e-Mutation) বা জমি খারিজের আবেদন করা সম্ভব।

মিউটেশন বলতে কোনো জীবের জিনগত উপাদান বা ডিএনএ-তে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটা পরিবর্তনকে বোঝায়। এই পরিবর্তনগুলি খুব ছোট, যেমন একটি একক নিউক্লিওটাইডের পরিবর্তন থেকে শুরু করে বড়, যেমন একটি সম্পূর্ণ ক্রোমোসোমের যোগ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে। সরকার রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনসহ এতদসংক্রান্ত অন্যান্য আইনের বিধানবলে দীর্ঘকাল পর পর ভূমি জরিপের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা স্বত্বলিপি ( মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান) প্রস্তুত করে। জরিপ-পরবর্তী সময়ে খতিয়ানে রেকর্ডীয় ভূমি মালিকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা রেকর্ডীয় মালিক বা তার উররাধিকারীগণ হতে ক্রয়-বিক্রয় বা বিভিন্নভাবে হস্তান্তর সূত্রে মালিকানা পরিবর্তনের ফলে উক্ত ভূমিস্বত্ব হালনাগাদ করার জন্য সহকারি কমিশনার(ভূমি)র নিকট নামজারি আবেদন করতে হয়। ভূমির মালিকানা পরিবর্তনের সাথে সাথে সহজে ও দ্রুত নামজারি করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে নামজারি ফি পরিশোধের ব্যবস্থাসহ ই-নামজারি সিস্টেম চালু করেছে।

নামজারি করতে কত টাকা লাগে? নির্ভুলভাবে ফরম পূরণ এবং সঠিক তথ্য প্রদানের ফলে নামজারি আবেদন নিস্পত্তি সহজতর হয়। বিভিন্ন ভুল বা তথ্যের গরমিলের কারণে নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হয়ে থাকে। অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানপূর্বক নামজারি আবেদন ফরম পূরণ ও দাখিল, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্তি, ফি পরিশোধ প্রভৃতি কাজ নির্ভুল ভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত আবেদনকারীকে এই নির্দেশিকা ভালভাবে পাঠ করে ও বুঝে সঠিকভাবে পূর্ব-প্রস্স্তুতি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আপনি অন-লাইন নামজারি সিস্টেমে ঢুকে পাশাপাশি “অনলাইনে আবেদন করুন” এবং “আবেদন ট্র্যাকিং” নামে দুটি অংশ দেখতে পাবেন। বাম পাশে “অনলাইনে আবেদন করুন”অংশের নীচে “নামজারি আবেদনের জন্য ক্লিক করুন” লেখায় ক্লিক করে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। তার আগে আপনাকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। আবেদন দাখিলের সময় আপনাকে আবেদন ফি ২০/- ও নোটিশ জারি ফি ৫০/- মোট ৭০/ টাকা শুধুমাত্র অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য আপনি নগদ, রকেট, বিকাশ, উপায়,ভিসা কার্ড, মাস্টার্ড কার্ড সহ অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্টস ব্যবহার করতে পারবেন, বিধায় আবেদন করার সময় সুবিধাজনক একটি মাধ্যমে ৭০/-টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা হাতের কাছে রাখুন।

লক্ষ্য করুন, এইসব তথ্য ফরমে সরাসরি লিখতে গেলে ভুল হয়ে যেতে পারে, তাই এগুলো আগে থেকেই আপনি আপনার ল্যাপটপ/ডেস্কটপ কম্পিউটারে আপনার নামে খোলা ফোল্ডারটিতে একটি ওয়ার্ড ফাইলে অভ্র নিকশ ফন্টে টাইপ করে রাখতে পারেন, যা যথাসময়ে কপি-পেস্ট করে আবেদন ফর্ম পূরণ করা সহজ হবে।

আবেদন ফর্ম পূরণের সময় আপনাকে আবেদনকারী/অবেদনকারীগণের প্রত্যেকের এবং আবেদনকারী নিজে না হয়ে প্রতিনিধি হলে প্রতিনিধির অর্থাৎ আবেদনকারী পক্ষের প্রত্যেকের এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি,নিজ নিজ স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধ সনদ(যাহা প্রযোজ্য), আবেদনকারী RJSC নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হলে নিবন্ধন সনদ, উওরাধিকার সূত্রে নামজারি হলে উত্তরাধিকার সনদ পত্র, সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা প্রভৃতি প্রমাণকের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে, এইসব স্বাক্ষর ছবি ও কাগজ আলাদা আলাদাভাবে jpg বা png ফরমেটে স্ক্যান করে আপনার ল্যাপটপ/ডেস্কটপ কম্পিউটারে আপনার নামে খোলা ফোল্ডারটিতে রাখতে পারেন, যা ফরম পূরণের সময় যথাসময়ে Chose file ক্লিকের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে পারবেন। আবেদিত জমির খতিয়ানের কপি, ক্রয়সূত্রে হলে দলিলের কপি, আদালতের রায়-ডিক্রি সূত্রে হলে রায় ডিক্রির কপি, অন্য সূত্রে হলে সংশ্লিষ্ট কাগজাদির কপি স্ক্যান করে সংযুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তির ক্ষেত্রে স্ক্যান ফাইলটি অবশ্যই pdf ফরমেটে হতে হবে। অন্য কোন ফরম্যাটে ফাইলটি আপলোড করা যাবে না। এক্ষেত্রেও আপনি এইসব ডকুমেন্ট আলাদা আলাদাভাবে pdf করে আপনার ল্যাপটপ/ডেস্কটপ কম্পিউটারে আপনার নামে খোলা ফোল্ডারটিতে রাখতে পারেন, যা ফর্ম পূরণের সময় যথাসময়ে Chose file ক্লিকের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে পারবেন। প্রতিটি স্ক্যান ফাইল আপলোড করার পর তা কি ধরণের ফাইল ( দলিল /খতিয়ান/ওয়ারিশ সনদ ) তা ড্রপ ডাউন হতে সিলেক্ট করে নিতে হবে।

Caption: https://mutation.land.gov.bd

ই-নামজারি (e-Mutation) করার জন্য কি কি কাগজপত্র আপলোড করতে হবে?

  1. আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সংযুক্তির ক্ষেত্রে স্ক্যান ফাইলটি অবশ্যই jpg, png অথবা pdf ফরমেটে হতে হবে । অন্য কোন ফরমেটে হলে ফাইলটি আপলোড করা যাবেনা।
  2. স্ক্যান ফাইলটির সাইজ অবশ্যই ২৫ মেগাবাইটের (MB) এর মধ্যে হতে হবে ।
  3. ফাইল সাইজ ২৫ মেগাবাইটের বেশি হলে https://www.pdf2go.com/resize-pdf অথাবা https://www.sejda.com/compress-pdf অথবা এধরনের যেকোন অনলাইন টুল ব্যবহার করে pdf ফাইল সাইজ অনেক কমিয়ে আনা যায় ।
  4. স্ক্যান ফাইলটি আপলোড হওয়ার পর তা কি ধরনের ফাইল (দলিল/খতিয়ান/ওয়ারিশ সনদ) তা ড্রপডাউন হতে সিলেক্ট করে দিতে হবে ।

ই নামজারি প্রসেস কি?

আবেদন ফরমের প্রথমেই নামজারির জন্য আবেদিত জমিটি আপনি ক্রয়, ওয়ারিশ, হেবা, ডিক্রি, নিলাম, বন্দোবস্ত, অন্যান্য কী সূত্রে পেয়েছেন তা চিহ্নিত করতে হবে। এখনে উল্লেখ্য যে ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অন লাইনে ক্রয়সূত্রে নামজারি আবেদন ফরমটি আরও তথ্য সমৃদ্ধ করেছে, তাই ক্রয়সূত্রে সিলেক্ট করলে আপনার সামনে নতুন একটি ফর্ম আসবে, এতে আপনাকে কিছু বর্ধিত তথ্য দিতে হবে, ক্রমান্বয়ে অন্যান্য সকল সূত্রে আবেদনের জন্য পৃথক পৃথক ফরম ডেভেলপ করা হবে। ক্রয়সূত্রে ছাড়া অন্যান্য সূত্রের ক্ষেত্রে পূর্বতন ফরমটিই চলমান আছে। আবেদিত জমির তথ্য অংশে আপনি ক্রমান্র্বয়ে বিভাগ, জেলা, উপজেলা সিলেক্ট করার পর মৌজা সিলেক্ট করবেন। মৌজার দীর্ঘ তালিকা থেকে আপনার মৌজাটি খুঁজে পেতে মৌজার নাম ও জেএল নম্বর স্মরণ রাখবেন। উল্লেখ্য যে একটি নামজারি আবেদন শুধুমাত্র একটি মৌজার জমি্র মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্জিত জমি একাধিক মৌজায় হলে প্রতিটি মৌজার জমি নামজারির জন্য পৃথক পৃথক আবেদন করতে হবে। নামজারির আবেদন সর্বশেষ জরিপ রেকর্ডের ভিত্তিতেইহবে, সেমতে আপনাকে আপনার এলাকার জন্য এসএ/এমআরএস, আরএস/বিএস, মহানগর, দিয়ারা, সিএস যা প্রযোজ্য জরিপটি সিলেক্ট করতে হবে, এজন্য আপনি এ বিষয়ে আগেই নিশ্চিত হয়ে সিলেক্ট করবেন। আপনাকে জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ টাইপ করে দিতে হবে। অনুরূপ ভাবে একই খতিয়ান থেকে বা একই মৌজাভুক্ত একাধিক খতিয়ান থেকে আরও দাগে আরো জমি এই নামজারির সাথে যুক্ত করতে হলে সেক্ষেত্রে “আরও খতিয়ান সংযুক্ত করুন” ও “আরও দাগ সংযুক্ত করুন” চেপে আরও খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ , খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ ইত্যাদি টাইপ করে দিতে হবে। নির্ভুল তথ্যভুক্তির স্বার্থে আপনি আপনার ল্যাপটপ/ডেস্কটপ কম্পিউটারে আপনার নামে একটি ফোল্ডার করে তাতে একটি ওয়ার্ড ফাইলে জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ, খতিয়ানে উক্ত দাগে জমির পরিমাণ , মোট আবেদিত জমির পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য অভ্র নিকশ ফন্টে টাইপ করে রাখতে পারেন। জমির পরিমাণ একরে প্রদান করবেন। আবেদনের সময় আপনি তথ্যগুলো কপি-পেস্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন।

ক) সর্বশেষ রেকর্ড অথবা সর্বশেষ নামজারি হতে জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা আছে কি না অর্থাৎ মধ্যবর্তী হস্তান্তরের প্রমাণপত্র/বায়া দলিলসমূহ আছে কিনা?

খ) আবেদনকারীর দলিলমূলে মালিকানা দাবী ও হিস্যা সঠিক আছে কি না?
গ) আবেদিত জমি দখলে আছে কি না? যদি আবেদিত জমি দখলে না থাকে, তাহলে একটি ব্যাখ্যা আবেদনের সঙ্গে প্রদান করতে হবে।

ঘ) আংশিক খাস/ অর্পিত/ অধিগ্রহণকৃত আছে কি না? আবেদিত জমি আংশিক খাস/ অর্পিত/ অধিগ্রহণকৃত হলে নিষ্কণ্টক অংশ আলাদাভাবে চিহ্নিত করার প্রমাণক সহ ব্যাখা দিতে হবে।
ঙ) আবেদিত জমিতে কোন দেওয়ানী মামলা আছে কিনা ? মামলা থাকলে হস্তান্তরে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? নিষেধাজ্ঞা নাই মর্মে আদালতের ইনফরমেশন স্লিপ সংযুক্ত করতে হবে।

চ) জমিতে সরকারি স্বার্থ আছে কি না? থাকলে কোন ধরণের স্বার্থ আছে, তা নির্বাচন করতে হবে। দাগে সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অংশ (খাস / অর্পিত / পরিত্যক্ত / ওয়াকফ / বিনিময় / দেবোত্তর / অধিগ্রহণকৃত / খাসমহাল / কোর্ট অফ ওয়ার্ডস / সরকারি সংস্থা / অন্যান্য) চিহ্নিত করে আবেদিত জমি এর বাইরে হলে কোন অংশে তা চিহ্নিত করতে এবং ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

ছ) সর্বশেষ অর্থ বছর পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা আছে কি না? ভূমি উন্নয়ন কর হাল নাগাদ না থাকলে আবেদনকারী তা হারাহারি ভাবে বকেয়াসহ হালনাগাদ পরিশোধ করবেন মর্মে ঘোষণা দিতে হবে।

জ) আবেদনে বর্ণিত তফসিল জমি এপার্টমেন্ট বা ফ্লোর স্পেস কি না? যদি তা হয় তবে এপার্টমেন্ট নম্বর প্রদান করতে হবে, শুধু জমির জন্য এপার্টমেন্ট/ফ্লোর নম্বর প্রদান করতে হবে না।

ঝ) আবেদনকারী/আবেদনকারীগণের এই মৌজায় বর্তমানে কোনো খতিয়ান আছে কিনা? যদি তাদের আবেদিত জমির মৌজায় এক বা একাধিক খতিয়ান থাকে, তাহলে হ্যাঁ নির্ধারণ করে খতিয়ান নম্বর/ নম্বরসমূহ এন্ট্রি করুন।  দুটি খতিয়ান নম্বরের মাঝে কমা (,) অথবা সেমিকোলন (।) ব্যবহার করবেন। ঘোষণা প্রদানের পর, জমির তফসিল সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে।  

প্রতিটি pdf ফাইলের সাইজ অবশ্যই সর্বোচ্চ 1.25 MB এর মধ্যে হতে হবে এবং সবগুলো সংযুক্তি ফাইল মিলিয়ে অবশ্যই 25 MB এর মধ্যে হতে হবে। সামগ্রিক ফাইল 25MBএর বেশি হলে https://www.pdf2go.com/resize-pdf অথবা https://www.sejda.com/compress-pdf অথবা এ ধরণের যেকোন অনলাইন টুল ব্যবহার করে pdf ফাইলের সাইজ কমানো যায় এবং Microsoft Office – Edit Pictures-Compress Pictures ব্যবহার করে ক jpg বা png ফাইলের সাইন কমিয়ে আনা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *