দুর্নীতির শিকড় উপড়াতে শুধু পে-স্কেল যথেষ্ট নয়: আমলাতন্ত্রে কঠোর শাস্তির দাবি
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়িত হলে প্রশাসন এবং জনগণের মধ্যে আস্থা শতভাগ শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তারা বলছেন, শুধু বেতন বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়; দুর্নীতির মূল উৎপাটনের জন্য আমলাতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা এবং দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা আবশ্যক।
বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, নিম্ন বেতন যেমন দুর্নীতির একটি ‘শিকড়’, তেমনি উচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব আরেকটি বড় সমস্যা। তাই পে-স্কেলের পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারে মনোযোগ দিতে হবে।
উচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন, শুধু বদলি নয়
কর্মচারী সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, প্রশাসনের উচ্চ স্তরে কেবল রুটিন বদলি বা পদায়ন খুব একটা কাজে আসবে না। বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন:
১. দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ: উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। ২. শাস্তির মুখোমুখি করা: চিহ্নিত কর্মকর্তাদের কেবল বদলি বা ওএসডি না করে অবিলম্বে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এতে প্রশাসনে এক ধরনের ভয় ও দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ পর্যায়ের দুর্বলতা বা নীরবতা নিম্ন পর্যায়ের দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। তাই নেতৃত্ব স্তরকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত ও আদর্শ স্থাপনকারী হতে হবে।
‘নতুন আইনে’ চাকরিচ্যুতির দৃষ্টান্ত
জনসেবা প্রদানে সরাসরি যুক্ত পুলিশ, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ এবং এনআইডি শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে দুর্নীতি রোধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে। এই জায়গাগুলোতে ঘুষ, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা জনগণের আস্থায় সবচেয়ে বেশি চিড় ধরায়।
এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করতে নতুন বা সংশোধিত আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। দুর্নীতি বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে অপরাধীদের চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর উদ্দেশ্য হলো—একটি বার্তা দেওয়া যে, জনসেবার নামে দুর্নীতি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।
জনগণের আস্থা শতভাগ বৃদ্ধি
কর্মচারীরা মনে করেন, যখন সরকার এক হাতে ন্যায্য বেতন কাঠামো দেবে এবং অন্য হাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে, তখনই জনগণের আস্থা শতভাগ পুনরুদ্ধার হবে। একটি ভালো বেতন কাঠামো তাদের স্বাবলম্বী করবে এবং কঠোর শাস্তির বিধান তাদের সৎ থাকতে বাধ্য করবে। এই দ্বিমুখী নীতিই দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনকে আরও সচল, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করে তুলতে পারে।
বর্তমানে পে-কমিশন তার কাজ শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়, পে-স্কেল বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকার দুর্নীতির এই কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেয়।