জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট কার্যক্রম ২০২৫ । দেওয়ানি (Civil) এবং ফৌজদারি (Criminal) উভয় ধরনের মামলা পরিচালনা হয়?
জেলা ও দায়রা জজ কোর্টে ২০২৫ সালে দেওয়ানি (Civil) এবং ফৌজদারি (Criminal) উভয় ধরনের মামলার পরিচালনা করা হয়। তবে, আইনগত সংস্কারের মাধ্যমে এই দুই ধরনের মামলার বিচারকদের পৃথক করার প্রক্রিয়া চলছে, যা ২০২৫ সালের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে-জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট কার্যক্রম ২০২৫
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট। এটি জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত, যা দেওয়ানি (Civil) এবং ফৌজদারি (Criminal) উভয় ধরনের মামলা পরিচালনা করে। এই কোর্টের প্রধান বিচারিক কর্মকর্তা হলেন জেলা ও দায়রা জজ। দেশের বিচারিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই কোর্টের ভূমিকা অপরিসীম।
জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের এখতিয়ার কি? প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট থাকে। এই কোর্ট দুটি ভিন্ন এখতিয়ারে কাজ করে:
জেলা জজ (District Judge) হিসেবে: এই এখতিয়ারে তিনি দেওয়ানি (Civil) মামলার বিচার করেন। জমিজমা, পারিবারিক বিরোধ, চুক্তিভঙ্গ, ঋণ সংক্রান্ত মামলা ইত্যাদি দেওয়ানি মামলার অন্তর্ভুক্ত। জেলা জজ কোর্ট মূলত সিভিল মামলার আপিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল মামলাও গ্রহণ করে।
দায়রা জজ (Sessions Judge) হিসেবে: এই এখতিয়ারে তিনি গুরুতর ফৌজদারি (Criminal) মামলার বিচার করেন। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, এবং মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডযোগ্য অন্যান্য অপরাধের বিচার দায়রা জজ কোর্টে হয়। এই কোর্ট মূলত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে প্রেরিত গুরুতর অপরাধের মামলাগুলোর বিচার করে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কে? জেলা ও দায়রা জজের কাজের চাপ কমানো এবং বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ করা হয়। একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (Additional District & Sessions Judge) সাধারণত নিম্নলিখিত ধরনের মামলা বা কেস দেখেন। জেলা ও দায়রা জজের নির্দেশক্রমে জেলা ও দায়রা জজ তার কাজের কিছু অংশ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের কাছে প্রেরণ করতে পারেন।
ফৌজদারি মামলা: গুরুতর অপরাধ যেমন: হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক সংক্রান্ত মামলা এবং অন্যান্য গুরুতর প্রকৃতির অপরাধের বিচার তিনি পরিচালনা করেন। এই ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা দায়রা জজের সমতুল্য।
দেওয়ানি মামলা: জমি সংক্রান্ত বিরোধ, চুক্তিভঙ্গ, পারিবারিক বিরোধ এবং অন্যান্য দেওয়ানি মামলার বিচারও তিনি করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা জেলা জজের সমতুল্য।
আপিল ও রিভিশন: নিম্ন আদালতের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার আপিল এবং রিভিশন আবেদনগুলোও তিনি শুনানি করেন।
বিশেষ ক্ষমতা ও এখতিয়ার কতটুকু? দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ উভয়ই মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। তবে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট বিভাগ) অনুমোদন প্রয়োজন হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল বা অন্যান্য বিশেষ আদালতের বিচারক হিসেবেও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দায়িত্ব পালন করতে পারেন, যখন সরকার কর্তৃক তাদের এই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
দায়রা জজ কোর্টে কারা যাবেন?
দায়রা জজ কোর্টে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ সীমিত। সাধারণত, নিম্ন আদালতের (যেমন: জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) বিচার শেষে যে মামলাগুলো আপিলের জন্য বা গুরুতর অপরাধের মামলা হিসেবে রেফার করা হয়, সেগুলোর বিচার এখানে হয়। অর্থাৎ, নিম্ন আদালতের বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে থাকা বা গুরুতর প্রকৃতির ফৌজদারি মামলার বিচার এই কোর্টে সম্পন্ন হয়। যেসব ব্যক্তি বা পক্ষ সরাসরি দায়রা জজ কোর্টে যেতে পারেন, তারা হলেন আইনজীবীর মাধ্যমে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ভিকটিম তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে এই কোর্টে জামিনের আবেদন বা অন্যান্য আইনি সহায়তা চাইতে পারেন আপিলকারী নিম্ন আদালতের কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলার রায়ে অসন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষ জেলা ও দায়রা জজ কোর্টে আপিল করতে পারেন। রিভিশনকারী কোনো মামলার বিচারিক কার্যক্রম বা রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই কোর্টে রিভিশন আবেদন করা যায়।
জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই কোর্ট ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তাদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার ব্যবহার করে বিচারিক প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করে তোলেন। এই আদালতগুলোর সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দেশের নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ হয়।