এইমাত্র পাওয়া

শুভ নববর্ষ ১৪৩২ । ১লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন কিভাবে শুরু হলো?

বাংলা নববর্ষ মানেই পাত্তা ইলিশ হবে এমনটিও দেখা যায়-মেলায় স্টলগুলোতে পান্তা ইলিশের ব্যবস্থা রাখা হয়-দারিদ্র সীমার নিচের মানুষ এ সময় উচ্চ মূল্যের কারণে ইলিশ কিনতে পারে না –শুভ নববর্ষ ১৪৩২

বাংলা নববর্ষের স্লোগান কি? আপনাকেও জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা! শুভ নববর্ষ! আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন বছর শুরু হলো। আপনার নতুন বছরটি আনন্দ, সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যে ভরে উঠুক এই কামনা করি।  বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য বা স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে: “আমরা তো তিমিরবিনাশী” এই স্লোগানটি কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘তিমিরহননের গান’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি অন্ধকার বা সকল অশুভ শক্তিকে দূর করে আলোর পথে যাত্রার প্রতীকী আহ্বান। সাধারণত, এই মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগানটিই পহেলা বৈশাখের মূল স্লোগান হিসেবে পরিচিতি পায়।

বাংলা নববর্ষ পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন প্রথম কখন শুরু হয়? বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন ১৯৮০-এর দশকে শুরু হয়। সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন আহমেদের প্রস্তাবেই প্রথম নববর্ষে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে আসছে। সেই অনুষ্ঠানে পান্তা-ইলিশের প্রচলন না থাকলেও, ১৯৮০-এর দশকে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেবারের বর্ষবরণের কিছুদিন আগে সাংবাদিক বোরহানউদ্দিন আহমেদ প্রথম নববর্ষ উদযাপনের বিষয়ে ভাবতে গিয়ে পান্তা ইলিশ আয়োজনের প্রস্তাব দেন। বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয় মোগল আমলে। মোগল সম্রাট আকবর প্রথমবারের মতো বাংলা সনের প্রচলন করেন।

কখন শুরু হয় গণনা? বাংলা সন চালু করার আদেশ দেওয়া হয় ৯৯২ হিজরিতে (১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ)। তবে এর গণনা শুরু করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের বছর (৯৬৩ হিজরি বা ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ) থেকে। এই কারণে বর্তমানে আমরা যখন বাংলা সন গণনা করি, তখন খ্রিস্টাব্দের বছর থেকে ৫৯৩ বিয়োগ করি (পহেলা বৈশাখের পর থেকে)। যেমন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন ছিল ১৪৩০ (২০২৩ – ৫৯৩ = ১৪৩০) এবং আজ, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ শুরু হলো (২০২৫ – ৫৯৩ = ১৪৩২)। সুতরাং, যদিও বাংলা সনের গণনা আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর (১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ) থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু এই ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাটি কার্যকরভাবে প্রবর্তিত হয় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপন ১৪৩২ / উৎসব কেন্দ্রগুলো ভিজিট করতে পারেন

সোনারগাঁয়ের জয়রামপুর গ্রাম: এখানে প্রাচীন বটগাছের নিচে ‘বউমেলা’ নামে পরিচিত একটি পাঁচ দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।

Caption: Panta Elish

শুভ নববর্ষ ১৪৩২ । ঢাকায় কোথায় কোথায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে যাবেন?

  1. রমনা বটমূল: ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছায়ানটের আয়োজনে এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। দিনব্যাপী চলবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।​
  2. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা অনুষদ: সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রাও অনুষ্ঠিত হবে, যা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ​
  3. রবীন্দ্র সরোবর: সকাল ৬টায় সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।​
  4. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি: ১৩-১৪ এপ্রিল নবপ্রাণ আন্দোলনের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক, প্রদর্শনী ও বাউল গানের আয়োজন থাকবে।​  
  5. উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড ও পূর্বাচলের তিনশ ফুট: এই স্থানগুলোতে বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়, যেখানে আপনি গ্রামীণ মেলার পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন।

বাংলা নববর্ষ প্রথম কখন শুরু হয়?

বাংলা নববর্ষ বা বাংলা সনের (বঙ্গাব্দ) প্রবর্তন কখন হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও, সবচেয়ে প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য মতটি হলো: বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন মুঘল সম্রাট আকবর। এর পেছনের কারণটি ছিল মূলত খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য। হিজরি সন, যা চান্দ্রবর্ষ ভিত্তিক, সেটি ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে চলত না। ফলে ফসল কাটার সময় ও খাজনা আদায়ের সময়ের মধ্যে গরমিল দেখা দিত। এই সমস্যা দূর করার জন্য সম্রাট আকবর একটি সৌর বছর ভিত্তিক নতুন ক্যালেন্ডার চালু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার নির্দেশে বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহুল্লাহ সিরাজি সৌর বছর এবং হিজরি সনের সমন্বয় করে বাংলা সনের সূচনা করেন।
     
     
     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *