গুম তদন্ত কমিশন ২০২৪ । Disappeared বা গুম হওয়া ব্যক্তি কমিশনের কাজ কি?

বিগত সরকারের আমলে প্রায় হাজার খানেক লোক গুম বা উদাও হয়েছে-তাদের তথ্য বের করতেই অন্তর্বতীকালীন সরকার একটি কমিশন গঠন করে দিল–গুম তদন্ত কমিশন ২০২৪

কমিশন কি গুমে জরিতদের বিচারের সুপারিশও করবে? এস.আর.ও. নম্বর ৩১২-আইন/২০২৪ । – সরকার, Commissions of Inquiry Act, 1956 (Act No. VI of 1956) এর section 3 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক “আয়না ঘর’ বা যে কোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম (enforced disappearance) হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদনের নিমিত্ত ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

কমিশন কোন সময়ের জন্য তদন্ত করবে? বিগত ০৬/০১/২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ হইতে ০৫/০৮/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক ‘আয়না ঘর’ বা যে কোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাহাদের সনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হইয়াছিল উহা নির্ধারণ করা, এবং সে উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে তথ্য সংগ্রহ করবেন।

তদন্ত কমিশনের কাজ কি? বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাসমূহের বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা এবং এতদ্‌বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে। বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাহাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করবে। বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করবে। বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা এবং তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান করবে। বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান করা এবং উপরি-বর্ণিত উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কার্য করবে।

তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোন স্থান পরিদর্শন এবং যে কোন ব্যক্তিকে কমিশনে তলব করিতে ও জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবে।

তদন্ত কমিশন, Commissions of Inquiry Act, 1956 অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করিয়া এই প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হইতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে সরকারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করিবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করিতে পারিবে। তদন্ত কমিশনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্যগণ হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করিবেন।

Caption: Ghum Committee bd

গুম টাস্কফোর্স ২০২৪ । ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিশনে কে কে আছেন?

  1. বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগ-সভাপতি
  2.  বিচারপতি মোঃ ফরিদ আহমেদ শিবলী, সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগ
  3. জনাব নূর খান, মানবাধিকার কর্মী সদস্য
  4. মিজ্‌ নাবিলা ইদ্রিস, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সদস্য
  5. জনাব সাজ্জাদ হোসেন, মানবাধিকার কর্মী সদস্য

বিগত সরকার কেন মানুষ গুম করেছে?

বিগত সরকার কেন মানুষ গুম করেছে, এই প্রশ্নের সঠিক এবং নিশ্চিত উত্তর দিতে গেলে আমাদের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হবে।  অনেকের মতে, রাজনৈতিক স্বার্থ হতে পারে মানুষ গুম করার অন্যতম কারণ। বিরোধী দলের নেতাকর্মী বা নাগরিক সমাজের কর্মীদের নিরস্ত করার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য বা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য এ ধরনের কাজ করা হতে পারে। ক্ষমতায় থাকা সরকার ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। মানুষ গুম করা এমন একটি কাজ যা দিয়ে তারা ভয় দেখাতে পারে এবং বিরোধীদের মুখ বন্ধ রাখতে পারে। ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিগত স্বার্থও মানুষ গুম করার পেছনে একটি কারণ হতে পারে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অন্য কোন ব্যক্তিগত কারণে কাউকে গুম করা হতে পারে।

সামাজিক অস্থিরতা বা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খারাপ হলে ক্ষমতাসীনরা মানুষ গুম করার মতো অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে পারে। মানুষ গুম করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এটি একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে মানুষের জীবন ও স্বাধীনতা হরণ হয় এবং সমাজে ভীতি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিশ্বের অনেক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা মানুষ গুম করার ঘটনাকে নিন্দা করেছে এবং এ ধরনের অপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশে বিগত কয়েক দশকে মানুষ গুমের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠেছে।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে বাংলাদেশে ১৭ বছরে ৬২৯ জন গুমের শিকার হয়েছেন।
     
     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *