জমি কেনা বেচার ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, জমির কাগজপত্র বা দলিল যদি ঠিক না থাকে তবে মালিকানা হারাতে হবে-জাল দলিল চেনার উপায় ২০২৩

পরের দলিল বাতিল হয়? হ্যাঁ। জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে সাবধান না হলে পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ভুগতে হয়। এমন বহু মানুষ রয়েছেন, জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আসল দলিল চিনতে না পারায় ঝামেলায় পড়েন। এজন্য দলিল চেনা খুবই জরুরি। তাই আজকের আলোচনা, কিভাবে চেনা যাবে জাল দলিল।

ভূমি অফিসের ভলিউমের তথ্য যাচাই করতে হবে? হ্যাঁ। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এজন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।

স্বাক্ষর যাচাই করে নকল দলিল শনাক্ত করা যায় না? যায়। তবে আরও বেশ কিছু পন্থা রয়েছে। অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজা হয়। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি নির্ণয় করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে। আগের দলিল কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল হতে পারে। একই সঙ্গে তারিখটিও ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ কোনো সরকারি বন্ধের দিন থাকলে সন্দেহের অবকাশ থাকবে। অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।

মূল মালিক শনাক্ত কিভাবে করে? এক জমির একাধিক মালিকের নামে করা থাকলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে। এক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা নির্ণয় করতে হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, সেটা সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল আছে, তাহলে বুঝতে হবে, কোনো জটিলতা আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা। দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না, এসব যাচাই করতে হবে।

জাল দলিল চেনার ৯ উপায় । জাল দলিলের মামলা । জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম ।  জাল দলিল আইন । জাল দলিল বাতিলের মামলা

সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত দলিলের দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে সরেজমিন কথা বলে নেয়া দরকার। জমির স্বত্ব কী বা মালিকানা যাচাই করতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল, বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না।

জাল দলিল সম্পর্কে জানার সাথে সাথে জাল দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে। সমস্ত আইনের প্রথম তফসিলের ধারা ৯১ অনুসারে, জাল দলিল তৈরির বিষয়ে জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। জালিয়াতি দণ্ডবিধির ধারা ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ এর অধীনে ফৌজদারিভাবে বিচার করা যেতে পারে।

দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে খেয়াল রাখুন। প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে একটি ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে। এ নম্বরটি ঠিক আছে কি না, প্রয়োজনে স্ট্যাম্প বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে যাচাই করে নিন।

জাল দলিল চেনার ৯ উপায় ২০২৩ । শুধুমাত্র স্বাক্ষর যাচাই নয়, আরও অনেক পন্থা রয়েছে

1. ভলিউডেমর তথ্য
2. স্বাক্ষর যাচাই
3. মূল মালিক শনাক্ত
4. নামজারি
5. আমমোক্তারনামা
6. তারিখ যাচাই
7. লেখক যাচাই
8. মালিকানা যাচাই
9. সিল-স্ট্যাম্প যাচাই

আমমোক্তারনামা ও তারিখ যাচাই কিভাবে করে?

সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না যাচাই করতে হবে। কোনো দান করা জমি হলে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করতে হবে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না এবং দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, তা যাচাই করতে হবে।