👩‍🍼 ‘শিশু ভাতা’ আর ‘গর্ভবতী ভাতা’ কি একই? সরকারি সহায়তার পরিবর্তিত রূপ ও আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে দরিদ্র মা ও শিশুর সুরক্ষায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে ভাতা প্রদান করা হয়, সেটির নাম ও কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। একসময় যা ‘শিশু ভাতা’ বা ‘মাতৃত্বকাল ভাতা’ নামে পরিচিত ছিল, তা এখন বৃহত্তর পরিসরে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’-তে রূপান্তরিত হয়েছে। আপনার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সরকারি কর্মসূচির এই পরিবর্তনের দিকটি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মূল পরিবর্তন: একীভূত কর্মসূচি

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি’ এবং ‘কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচি’-কে একীভূত করে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ চালু করা হয়েছে।

• পূর্বের ধারণা: অনেকের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে ‘শিশু ভাতা’ এবং ‘গর্ভবতী ভাতা’ দুটি আলাদা বিষয় ছিল, যা এখন এক হয়ে গেছে। সরকারি তথ্যমতে, এই সহায়তা এখন মা ও শিশুর পুষ্টি এবং বিকাশের জন্য মাতৃগর্ভ অর্থাৎ শূন্য থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রদান করা হয়।

• ভাতার পরিমাণ ও সময়কাল: এই কর্মসূচির আওতায় একজন দরিদ্র মা বর্তমানে ৩৬ মাস (মোট ৩ বছর) ধরে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে থাকেন। এই ভাতা প্রথম অথবা দ্বিতীয় (দুটি) সন্তানের জন্য প্রযোজ্য।

কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া

এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করা, খর্বাকায় শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতের মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা করা।

১. আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান কাগজপত্র:

২. আবেদনের জন্য মূল শর্তাবলী (সাধারণত যা প্রযোজ্য):

• বয়স: আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

• গর্ভধারণ: প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল হতে হবে (যেকোনো একবার এই ভাতা পাওয়া যায়)।

• আয়ের সীমা: পারিবারিক মাসিক আয় সাধারণত ৮,০০০ টাকার বেশি হবে না।

• অন্যান্য: দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পান। আবেদনকারীকে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে এবং তার নিজের বা পরিবারের কোনো কৃষি জমি বা মৎস্য চাষের জন্য পুকুর না থাকার শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে (কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে)।

৩. আবেদন প্রক্রিয়া:

বর্তমানে এই কর্মসূচিতে আবেদন অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই করা যায়:

• অনলাইন: গর্ভবতী মা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং তথ্য আপার মাধ্যমে অথবা বাড়িতে বসে সেলফ এনরোলমেন্ট করতে পারেন।

• অফলাইন: ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক আবেদনপত্র গ্রহণ ও বাছাই করা হয়। আবেদনপত্র প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে পৌঁছানো হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের মাধ্যমে আবেদনকারীর গর্ভাবস্থার তথ্য যাচাই করা হয়। এরপর নির্বাচিত ভাতাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করে সরাসরি জিটুপি (G2P) পদ্ধতিতে (সরকার থেকে ব্যক্তি) মোবাইল বা ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে ভাতা প্রদান করা হয়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে কি স্বামীর ঠিকানা হতে আবেদন করতে হয়?

মাতৃত্বকালীন ভাতা (যা এখন ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ নামে পরিচিত) আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণত আবেদনকারী যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন (স্বামীর বাড়ি) সেই ঠিকানাই ব্যবহার করা হয়।

তবে এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা ভালো:

• বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা: অনলাইন বা অফলাইন আবেদন ফরমে সাধারণত দুটি ঠিকানা পূরণ করার জায়গা থাকে:

  • বর্তমান ঠিকানা: আপনি বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন।

  • স্থায়ী ঠিকানা: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অনুযায়ী আপনার স্থায়ী ঠিকানা।

  • যদি বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হয়, তবে উভয় ঠিকানাই পূরণ করতে হয়। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাতাভোগী যে ইউনিয়ন/পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা এবং বর্তমানে বসবাস করছেন, সেই এলাকার মাধ্যমেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

• ভাতাভোগী নির্বাচন: আপনার আবেদনটি আপনার বর্তমান বা স্থায়ী ঠিকানার (অর্থাৎ আপনি যেখানকার অধিবাসী হিসেবে পরিচিত) স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যাচাই করা হয়। যেহেতু বিবাহিত মহিলারা সাধারণত স্বামীর ঠিকানায় বসবাস করেন, তাই সেই ঠিকানার তথ্যই যাচাইয়ের জন্য প্রধান গণ্য হয়।

• দরিদ্রতার প্রমাণ: ভাতার মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মা ও শিশুর সহায়তা করা। তাই, আপনার আর্থ-সামাজিক অবস্থা (যেমন: পারিবারিক আয়, নিজস্ব জমি, বসতবাড়ির ধরন ইত্যাদি) যাচাই করার জন্য আপনি যেখানে বাস করেন, সেই ঠিকানার তথ্যই প্রয়োজন হয়।

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এবং আপনি বর্তমানে যেখানে স্বামীর সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, এই দুটি তথ্যের ভিত্তিতেই আবেদন করতে হবে। যদি আপনার স্বামীর ঠিকানাই আপনার বসবাসের বর্তমান স্থান হয়, তবে সেই ঠিকানার তথ্য ব্যবহার করাই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত এবং সহজ হবে।

আবেদনের সঠিক পদ্ধতি জানতে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয় অথবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।

https://bdservicerules.info/child-vata-bd/