ক্যাডার শিক্ষক বদলির সব ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে ২০২৫ । বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বদলি/পদায়নে নতুন নীতিমালা কার্যকর?
সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ‘সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা, ২০২৫‘ কার্যকর করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পূর্বের ‘সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা-২০২০’ সংশোধন করে এই নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে, যা ৩০ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ০৬ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে (২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) এ সংক্রান্ত সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত সকল পদের বদলি/পদায়ন ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত থাকবে। এছাড়া, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে বদলি/পদায়নের ক্ষেত্রেও একই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
বদলি আবেদনের মূল নির্দেশনাসমূহ:
নতুন নির্দেশনাসমূহ মূলত বদলি ও পদায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে অনলাইনভিত্তিক করেছে। অনলাইনে আবেদনের জন্য কিছু নির্দেশনা মানতে হবে:
- অনলাইন আবেদন আবশ্যিক: প্রভাষক থেকে অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে বদলি/পদায়নের জন্য আবেদনকারীকে তার পিডিএস হালনাগাদ করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইন ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে প্রেরিত আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
- আবেদনের প্ল্যাটফর্ম: আবেদন করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (www.shed.gov.bd), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (www.dshe.gov.bd), এবং www.emis.gov.bd লিংকের নির্দিষ্ট ফর্মে।
- পছন্দের প্রতিষ্ঠান: একজন আবেদনকারী তার পছন্দের ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ)টি প্রতিষ্ঠানে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
- অগ্রায়ণ প্রক্রিয়া: বদলিভিত্তিক পদায়নের আবেদনপত্র অধ্যক্ষ/প্রতিষ্ঠান প্রধান অগ্রায়ণ করবেন এবং কোনো আবেদন পেন্ডিং রাখা যাবে না।
- পুনঃআবেদনের সময়সীমা: কোনো শিক্ষক/কর্মকর্তা একবার আবেদন করলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে আর আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবেন না।
- মূল্যায়ন ও আদেশ জারি: অধ্যক্ষ কর্তৃক আবেদন অগ্রায়নের পর মন্ত্রণালয়/মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ প্রতি ১৫ (পনের) দিন অন্তর তা মূল্যায়ন করবেন। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মঞ্জুরকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে ওয়েবসাইটে বদলিভিত্তিক পদায়ন আদেশ জারি করা হবে।
- নন-ক্যাডার কর্মকর্তার আবেদন: নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কোনো ক্যাডার পদে বদলিভিত্তিক পদায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- সতর্কতা: বর্ণিত প্রক্রিয়ার বাহিরে কোনো কর্মকর্তার বিভিন্ন মাধ্যমে রাজনৈতিক তদবির, চাপ সৃষ্টি ও আধা-সরকারি পত্র (ডিও লেটার) উপস্থাপন অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। এছাড়া অসম্পূর্ণ এবং হালনাগাদ না করা পিডিএস বিবেচনায় নেওয়া হবে না। বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক আদেশে সারাদেশে কলেজসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় পদ শূন্যকরণের ব্যবস্থা করবে।
ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা:
পূর্বে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে বদলি করত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে বদলি করত শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নতুন নীতিমালায় সব ধরনের বদলি-পদায়নের ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের হাতে নিয়েছে। এই ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ নিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা মনে করছেন, যখন সব জায়গায় বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে, সেখানে মন্ত্রণালয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে, যা প্রত্যাশিত নয়। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্তে সচিবালয়ে তদবির ও ভিড় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।



