এইমাত্র পাওয়া

৯ম পে স্কেল বিতর্ক ২০২৫ । ১:৪ অনুপাতের হিসাব কি ভুল? আসল দাবি হওয়া উচিত সর্বনিম্ন বেতন

জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-এর কাছে মতামত দেওয়ার সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত নিয়ে যে জোর বিতর্ক চলছে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এক শ্রেণির কর্মচারী বলছেন, বর্তমান বেতন কাঠামোয় সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) ও সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) বেতনের তুলনা করলে “বৈষম্য” শব্দটি প্রায়শই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

অনুসন্ধান: ১:৪ অনুপাতের হিসাব কি ঠিক?

গ্রেড বিভাজনে বৈষম্যের অভিযোগ ওঠলেও, একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে:

গ্রেড শুরুর মূল বেতন (শুরুর স্যালারি) শেষের মূল বেতন (লাস্ট স্যালারি)
গ্রেড-২০ ৳৮,২৫০/- ৳২০,০১০/-
গ্রেড-১ ৳২২,০০০/- (সাধারণত ৯ গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে আসেন) ৳৭৮,০০০/-

যদি শেষের বেতনের সাথে শেষের বেতনের তুলনা করা হয়:

  • ৳৭৮,০০০ (গ্রেড-১ শেষ) ৳২০,০১০ (গ্রেড-২০ শেষ) ৩.৮৮:১

যদি শুরুর বেতনের সাথে শুরুর বেতনের তুলনা করা হয় (গ্রেড-৯ এর শুরু):

  • ৳৭৮,০০০ (গ্রেড-১ শেষ) ৳৮,২৫০ (গ্রেড-২০ শুরু) ৯.৪৫:১

পর্যালোচকরা বলছেন, পূর্ণ ক্যারিয়ারের পরিসরে দেখা যায় যে গ্রেড-১-এর শেষ বেতন গ্রেড-২০-এর শেষ বেতনের তুলনায় ৪ গুণের বেশি নয়। অর্থাৎ, বর্তমানেও বেতনের অনুপাত ১:৪-এর কাছাকাছি, যা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের দাবিকৃত অনুপাতের খুব কাছে। তবে, গ্রেড-১ এর শুরুর দিককার (গ্রেড-৯ বা এর আশেপাশে) বেতনের সাথে গ্রেড-২০ এর শুরুর বেতনের তুলনা করলে অনুপাত অনেক বেশি দাঁড়ায়।

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, বৈষম্যের মূল কারণ ১:১০ বা ১:৮-এর মতো বিশাল অনুপাত নয়, বরং বেতনের সামগ্রিক অঙ্কটি

বৈষম্য নয়, আসল দাবি হোক ন্যূনতম জীবনধারণের বেতন

কর্মচারীদের একটি অংশ মনে করছে, “বৈষম্য” শব্দটি এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে, যেখানে অনেকে যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই উচ্চ বেতন প্রত্যাশা করেন। তাঁদের মতে, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বেতনের পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক, একে হিংসা বা বৈষম্য বলা উচিত নয়।

পরিবর্তে, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের উচিত হবে:

১. অন্যরা কি পেলেন তা না ভেবে, তাঁদের নিজেদের পরিবারের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া। ২. নূন্যতম জীবনধারণের বেতন (Living Wage) দাবি করা। একজন কর্মচারী একটি পরিবার নিয়ে সম্মানজনকভাবে চলার জন্য বর্তমান বাজারমূল্য ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে কমপক্ষে ৳৩৫,০০০ থেকে ৳৪০,০০০ টাকা শুরুর বেতন হওয়া উচিত।

এই লক্ষ্য অর্জিত হলে, বেতনের অনুপাত নিয়ে অযথা বিতর্ক করার দরকার হবে না, কারণ সর্বনিম্ন বেতন একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে যাবে।

উচ্চ গ্রেডে কতজন কর্মকর্তা যেতে পারেন?

গ্রেড ১, ২, ৩ এবং ৪-এ কতজন কর্মকর্তা/কর্মচারী যেতে পারেন—এই সংখ্যাটি সরকারের সাংগঠনিক কাঠামোর (Organogram) ওপর নির্ভরশীল। পদগুলো অত্যন্ত সীমিত হওয়ায় এবং পদোন্নতি একটি পিরামিড কাঠামোর মতো কাজ করায়, এই উচ্চ গ্রেডগুলোতে মোট কর্মচারীর সংখ্যার তুলনায় খুবই কম সংখ্যক কর্মকর্তা যেতে পারেন। এই পদগুলো সাধারণত দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, উচ্চ দক্ষতা এবং কঠোর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়।

অতএব, পে কমিশনের কাছে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হওয়া উচিত: “দেশের মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত মূল বেতন নিশ্চিত করা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *