সরকারি কর্মচারীদের ছুটির বিধিমালা: জেনে নিন আপনার অধিকার ও নিয়মাবলি
সরকারি চাকরিতে কর্মরতদের ছুটির ধরণ, পাওনা এবং সংশ্লিষ্ট নিয়মাবলি প্রধানত ‘The Prescribed Leave Rules 1959’ এবং ‘Bangladesh Service Rules’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন কর্মচারী তাঁর চাকরিকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে বেতনসহ বা বিনাবেতনে কয়েক ধরণের ছুটি ভোগ করতে পারেন। তবে এই ছুটির হিসাব এবং মঞ্জুরির ক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামো।
ছুটির ধরণ ও উপযোগিতা
বিধিমালা অনুযায়ী একজন কর্মচারী মূলত আট ধরণের ছুটি পেতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পূর্ণ বেতনে ছুটি, অর্ধ বেতনে ছুটি, বিনাবেতনে অসাধারণ ছুটি, বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি, সঙ্গরোধ (Quarantine) ছুটি, প্রসূতি ছুটি, অধ্যয়ন ছুটি এবং নৈমিত্তিক ছুটি।
পূর্ণ ও অর্ধ বেতনে অর্জিত ছুটি
তথ্যমতে, প্রত্যেক কর্মচারী তাঁদের কর্মদিবসের ১/১১ হারে পূর্ণ বেতনে ছুটি অর্জন করেন। তবে এককালীন চার মাসের বেশি পূর্ণ বেতনে ছুটি পাওয়া যায় না। যদি জমা ছুটির পরিমাণ চার মাসের বেশি হয়, তবে সেটি অন্য খাতে জমা থাকে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন: চিকিৎসা বা বিদেশ ভ্রমণ) তা ব্যবহার করা যায়। একইভাবে ১/১১ হারে অর্ধ বেতনে ছুটিও অর্জিত হয়, যার জমার কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই। প্রয়োজনে মেডিকেল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে অর্ধ বেতনে দুই দিনের ছুটির পরিবর্তে এক দিনের পূর্ণ বেতনের ছুটি ভোগ করা সম্ভব।
প্রসূতি ও অধ্যয়ন ছুটি
নারী কর্মচারীদের জন্য সরকারি বিধিতে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত প্রসূতি ছুটির বিধান রাখা হয়েছে, যা তাঁর মূল ছুটির হিসাব থেকে কাটা হয় না। একজন নারী কর্মচারী তাঁর সমগ্র চাকুরিজীবনে সর্বোচ্চ দুইবার এই ছুটি নিতে পারেন। অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষা বা কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য অর্ধ বেতনে সর্বোচ্চ বার মাস পর্যন্ত অধ্যয়ন ছুটি মঞ্জুর করা যেতে পারে।
বিশেষ পরিস্থিতি ও অসুস্থতা জনিত ছুটি
যদি কোনো কর্মচারী কর্তব্য পালনকালে আহত বা অক্ষম হন, তবে তিনি সর্বোচ্চ ২৪ মাস পর্যন্ত বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি পেতে পারেন। এছাড়া পরিবারে সংক্রামক ব্যাধি থাকলে অফিস প্রধানের নির্দেশে ২১ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত সঙ্গরোধ (Quarantine) ছুটি পাওয়া যায়। এই ছুটি ভোগকালে কর্মচারীকে অনুপস্থিত গণ্য করা হয় না।
অসাধারণ ছুটি ও নগদায়ন
যদি কোনো কর্মচারীর পাওনা ছুটি না থাকে অথবা তিনি লিখিতভাবে আবেদন করেন, তবে তাঁকে বিনাবেতনে ‘অসাধারণ ছুটি’ দেওয়া যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে এটি একবার তিন মাসের বেশি হয় না, তবে বিশেষ চিকিৎসা বা বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য এই মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া, যারা পেনশন সুবিধা গ্রহণ করেন না, তারা চাকরিকালীন প্রতি বছর প্রত্যাখ্যাত ছুটির ৫০% (সর্বোচ্চ ১২ মাস) নগদায়ন করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ম
-
ছুটি থেকে প্রত্যাবর্তন: ছুটি শেষ হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মচারীকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভ্রমণের দিন থেকেই তিনি কর্তব্যরত বলে গণ্য হবেন এবং ভ্রমণ ভাতা পাবেন।
-
PRL বা প্রস্তুতিমূলক ছুটি: অবসর গ্রহণের আগে একজন কর্মচারী ছয় মাস পূর্ণ বেতনে এবং ছয় মাস অর্ধ বেতনে মোট এক বছরের প্রস্তুতিমূলক ছুটি (PRL) পেতে পারেন। তবে অবসর গ্রহণের অন্তত এক মাস আগে এর জন্য আবেদন করতে হয়।
-
নৈমিত্তিক ছুটি: এটি ক্যালেন্ডার বছর অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত দিন অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, ছুটি কোনো অধিকার নয় বরং এটি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়। তবে বিধি মোতাবেক আবেদন করলে এবং যথাযথ কারণ থাকলে কর্তৃপক্ষ তা মঞ্জুর করে থাকেন।


