আগামী ১১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির ডিজিটাল লটারি
দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারি আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া। এবারও স্বচ্ছতা ও ভোগান্তি কমাতে ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারি পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে।
📅 লটারি অনুষ্ঠানের সময়সূচি
-
সরকারি স্কুল (প্রথম থেকে নবব শ্রেণী): আগামী ১১ ডিসেম্বর, রবিবার।
-
বেসরকারি স্কুল (প্রথম থেকে নবম শ্রেণী): একই দিনে, অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর, রবিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একই দিনে এই লটারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
🔑 স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল লটারি
শিক্ষার্থী ভর্তিতে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা এড়াতে এবং সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার এই ডিজিটাল লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত হবে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এই পদ্ধতিতে ভর্তির ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকবে না, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
লটারি অনুষ্ঠানের পর ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট স্কুল এবং শিক্ষা দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
লটারি কেন দেওয়া হয়?
ডিজিটাল লটারি পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রধান কারণগুলো হলো: স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সমান সুযোগ তৈরি করা এবং ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা ও দুর্নীতি এড়ানো। নিচে এর বিস্তারিত কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ⚖️ ভর্তিতে সমতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা
-
সবার জন্য সমান সুযোগ: একটি ভালো বা মানসম্মত স্কুলে ভর্তির জন্য যখন আসনের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়, তখন লটারি হলো সবচেয়ে নিরপেক্ষ পদ্ধতি। মেধা, পরিচিতি বা অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীই ভর্তির জন্য সমান সুযোগ পায়।
-
মানসিক চাপ হ্রাস: এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেওয়া বা কোচিং করার মানসিক চাপ কমে আসে।
২. 🛡️ দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ
-
স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা: ডিজিটাল লটারি সম্পূর্ণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে মানুষের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে না। ফলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেকোনো ধরনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বা অনৈতিক লেনদেন (ঘুষ) হওয়ার সুযোগ দূর হয়।
-
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ: আগে অনেক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি বা প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। লটারিতে সেই জটিলতাগুলো নেই।
৩. 🧩 ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস
-
সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়া: ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা এবং ফলাফল তৈরির বিশাল প্রক্রিয়া লটারির মাধ্যমে অনেক সহজ ও দ্রুত হয়ে যায়।
-
সময় সাশ্রয়: শিক্ষক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার আয়োজন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি কঠিন কাজগুলো করতে হয় না। এতে তাদের সময় সাশ্রয় হয় এবং তারা শিক্ষাদানে বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
সংক্ষেপে, লটারি পদ্ধতি একটি গণতান্ত্রিক ও নিরপেক্ষ উপায়, যার মাধ্যমে সীমিত আসনে বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্য থেকে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা সম্ভব হয়।
কোথায় চান্স পেয়েছে চেক করবো কিভাবে?
চান্স পেয়েছে কিনা, তা চেক করার জন্য সাধারণত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়। লটারির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর নিম্নলিখিত উপায়ে আপনি আপনার সন্তানের ভর্তির ফলাফল জানতে পারবেন:
১. স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইট: যে স্কুলে আবেদন করা হয়েছে, সেই স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হতে পারে। সাধারণত লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই তারা তাদের ওয়েবসাইটে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা (পিডিএফ ফাইল বা সার্চ অপশন) প্রকাশ করে।
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট: সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভর্তির লটারি পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এই ধরনের ওয়েবসাইট থেকে জেলা, থানা বা স্কুলভিত্তিক ফলাফল দেখা যায়। সাধারণত, এই ওয়েবসাইটে একটি রোল নম্বর বা আবেদন আইডি দিয়ে সার্চ করার অপশন থাকে।
৩. SMS এর মাধ্যমে: কিছু ক্ষেত্রে, আবেদন করার সময় যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেই নম্বরে নির্বাচিত হলে SMS-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
৪. স্কুলের নোটিশ বোর্ড: অফলাইন পদ্ধতি হিসেবে, অনেক স্কুল তাদের নিজস্ব নোটিশ বোর্ডেও নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা টাঙিয়ে দেয়।
সাধারণত যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
-
লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন বা তার পরের দিন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
-
“ভর্তির ফলাফল” বা “Admission Results” (যদি ইংরেজিতে থাকে) এই ধরনের লিংকে ক্লিক করুন।
-
আপনার সন্তানের আবেদন আইডি, রোল নম্বর অথবা জন্ম তারিখ (যদি চাওয়া হয়) দিয়ে সার্চ করুন।
-
ফলাফল প্রদর্শিত হলে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার সন্তান চান্স পেয়েছে কি না।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: ফলাফল প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বা লটারির আগে জানিয়ে দেওয়া হয়। আপনি যে স্কুলে আবেদন করেছেন, তাদের বিজ্ঞপ্তি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করুন।


