লাল গোলাপের ব্যবহার ২০২৩ । লাল গোলাপের ছবি দেখে নিন
ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে লাল গোলাপ কে আখ্যায়িত করা হয়। লাল গোলাপ ভালোবাসা এবং আবেগ এর রোমান্টিক মূহুর্ত। হলুদ গোলাপ কারো প্রতি ভক্তি ও বন্ধুত্ব প্রকাশ করে থাকে। ভালোবাসার সম্পর্ক গুলোতে লাল গোলাপ উপহার দেওয়ার একটি মূল কারণ হলো এর গন্ধ। যদিও বর্তমানে চাষ করা গোলাপ গুলোতে গন্ধ বলতে কিছুই থাকে না।
লাল গোলাপ অনেক আগে থেকে প্রিয় মানুষ টিকে উপহার দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর সুমধুর গন্ধ একজনকে সহজে আকৃষ্ট করে। অন্যান্য গোলাপের চেয়ে দেখতে অনেকটা সুন্দর। এর পেছনে একটি রূপকথার গল্প জড়িত আছে। একটি কবুতর প্রতিনিয়ত একটি সাদা গোলপ কে তার ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে আসে। কিন্তু সাদা গোলাপ কিছু তেই তার ভালোবাসা গ্রহণ করে না। একসময় বিরক্ত হয়ে সাদা গোলাপ কবুতর কে বলে যেদিন আমি লাল বর্ণ ধারণ করবো সেদিন আমি তোমার ভালোবাসা গ্রহণ করবো। এই কথা শুনে কবুতর তার ডানা কাটা রক্ত দিয়ে সাদা গোলাপ কে লাল করে এবং সত্যিকারের ভালোবাসার প্রমান দিল। যখন সাদা গোলাপ তার ভুল বুঝতে পেরে কবুতরের ভালোবাসা গ্রহণ করতে চাইলো ততক্ষণে কবুতর মারা গিয়েছিল। এই গল্প টি থেকেও লাল গোলাপ কে ভালোবাসার প্রতিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
আমরা ভালোবাসা দিবস হিসেবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি কে জানি। গোটা দেশে এই দিনটিতে গোলাপের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এর মধ্যে লাল গোলাপের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কারণ লাল গোলাপ কে ভালোবাসার প্রতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভালোবাসার প্রতিক হিসেবে লাল গোলাপ কে কেনো ধরা হয় এই ইতিহাস জানতে হলে আপনাকে যেতে হবে পৌরাণিক যুগে। প্রাচীন গ্রিক দের ভালোবাসার দেবী ছিল আ্যফ্রোদিতি। রোমান রা আবার তাকে ডাকতো ভেনাস নামে। উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন বিশ্বাস করতো দেবী আ্যফ্রোদিতি তাঁর প্রেমিক এ্যাডোমিস কে খুব ভালোবাসতেন। প্রেমিকের বিরহে আ্যফ্রোদিতির বুকে যে রক্ত ক্ষরণ হতো সেই রক্তে গোলাপের রং হয়ে উঠতো লাল। তবে সপ্তদশ শতকের এই কাহিনী কে জনপ্রিয় করে তোলেন সুইডেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লস। তিনি ফুলের ভাষা নামে একটি সাংকেতিক ভাষা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন এই ভাষা হবে কথা না বলে অনেক কথার প্রকাশ। যেমন কেউ যদি কাউকে হলুদ গোলাপ দেয় তাহলে বুঝতে হবে সে তাকে হতাশা করেছে। পারপেল রঙের গোলাপ দিলে বুঝতে হবে সে তাকে দুঃখিত বলছে। এবং কেউ যদি লাল গোলাপ দেয় তাহলে বুঝতে হবে সে গভীর প্রেমে অনুরক্ত। মূলত রাজা এবং পৌরাণিক দের কাহিনী মিলিয়ে লাল গোলাপ হয়ে উঠেছে বিশ্বে ভালোবাসার প্রতিক।
গোলাপের সংখ্যার ও অনেক মানে আছে। যেমন কাউকে একটি গোলাপ দেওয়া মানে প্রথম দেখায় ভালো লাগা। দুইটি গোলাপ দেওয়া মানে পারস্পরিক স্নেহ ও ভালোবাসা। বারোটি গোলাপ মানে তুমি আমার হও। আর পনেরোটি গোলাপ দেওয়া মানে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, তাই ক্ষমা প্রার্থী। চব্বিশ টি গোলাপ দেওয়ার মানে হলো আমি তোমার। পঞ্চাশ টি গোলাপ উপহার দেওয়ার মানে হলো সীমাহীন ভালোবাসা। একশো টি গোলাপ দেওয়ার মানে হলো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
পৃথিবীতে ফুল আছে প্রায় ৪ লাখ প্রজাতির। লাল গোলাপ সবচেয়ে রোমান্টিক ফুল হিসেবে সবার কাছে স্বীকৃত। শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে বহু কবি সাহিত্যিক তাদের কর্মে ফুল কে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রাচীন যুগে রোমান রা সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে লাল গোলাপ কে বেছে নিয়েছেন।
সৌন্দর্য চর্চায় ও সুভাসের জন্য গোলাপের পাপড়ি দিয়ে স্নান করতেন রোমান দেবীরা। পরবর্তী তে এই রেওয়াজ চলে আসে বাদশাহী মহলেও। চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো গোলাপের পাপড়ি। নববিবাহিতদের বিছানা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানোর রেওয়াজ শুরু হয় এই সময় থেকেই।
খ্রিষ্ট ধর্মের আগমনের প্রথম দিকে এই ধর্মের অনুসারী রা লাল গোলাপ কে মাতা মেরীর পূর্ণ ও সত্বীত্যের প্রতীক হিসেবে দেখতেন।
মধ্য যুগে ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পায় লাল গোলাপ। এতো গেলো পশ্চিমা সভ্যতার কথা।
প্রাচ্যেও গোলাপকে সমান মর্যাদা আর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভালোবাসা ও রোমান্সের প্রতীক যে জরিয়ে চীনে বহু পৌরাণিকা কাহিনী ও উপকথা প্রচলিত রয়েছে।
হিন্দুদের ধন সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষী কে এক হাজার আটটি ছোট গোলাপের পাপড়ি ও একশো আটটি বড় গোলাপ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
গোলাপ ফুল হৃদয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে বলে আরব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয়। সেখানে প্রচলিত একটি গল্প আছে। একটি সাদা গোলাপের উপর মুগ্ধ হয়ে গান গাইলেন এক পাপিয়া। গাইতে গাইতে সে গোলাপের এতো কাছে চলে যায় যে গোলাপের কাটা বিদ্ধ হয়ে তাঁর বুকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। লাল রঙে রাঙা হয়ে যায় সাদা গোলাপ। আর তখম থেকেই গোলাপের রং লাল হয়ে যায়। এসব পৌরাণিক কাহিনী ও ধর্ম বিশ্বাসের ফলে গোলাপ ফুল ক্রমে ফুলের রানী হিসেবে সবার মনে জায়গা করে নেয়।
আধুনিক যুগে আবেগ বা ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভালোবাসার মানুষ টিকে লাল গোলাপ দেওয়া হয়।
উনিশ শতকেও যখন মনের কথা খোলা খুলি ভাবে প্রকাশ করাকে অশ্লীল বলে মনে করা হয় তখন ভালোবাসার কথা বলার উপায় হিসেবে মানুষ বেছে নিয়েছিল ফুল দেওয়াকে। ভালোবাসি বলার পরিবর্তে একটি লাল গোলাপ পাঠালেই বিনিময় হয়ে যেত মনের গোপন কথা।