নক্ষত্র পতন ২০২৩ । সূর্যকে নক্ষত্র বলা হয় কেন
অনেক সময় রাতের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালে দেখা যায় যে নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে বা এইমাত্র নক্ষত্র খসে পড়লো। এই ঘটনাকে নক্ষত্র পতন বলা হয়। এরা আসলে কোনো নক্ষত্র নয়, এদের নাম উল্কা।মহাকাশে নানা ধরনের ছোট ছোট মহাকাশীয় বস্তু ভেসে বেড়ায়। এই বস্তু গুলো যখন কোনো গ্রহ নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আাসে, তখন এদের আকষর্ণে বস্তু গুলো এদের দিকে চলে আসে। রাতের আকাশে ছুটে চলা উল্কার কণা গুলোকে shooting star বলে।
এই ঘটনা মহাকাশের সকল গ্রহ-নক্ষত্র এমন কি চাঁদের মতো উপগ্রহেও ঘটে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অধিকাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎস ধূমকেতু। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময়, বিভিন্ন ধূমকেতুর কক্ষপথের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখন ওই সকল ধূমকেতুর ছোটো ছোটো অংশ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে।
পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা এই বস্তুগুলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলের সাথে এদের সংঘর্ষে এরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং একসময় তাতে আগুন ধরে যায়। রাতের আকাশে এই জ্বলন্তু বস্তুগুলোকেই উল্কা নামে অভিহিত করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি থেকে ১১৫ কিমি এর মধ্যে যে সকল উল্কা জ্বলতে জ্বলতে নিচে নেমে আসে, সেই উল্কাগুলোই ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়।
নক্ষত্র একটি গ্যাসীয় ভান্ডার। অপরদিকে এই খসে পড়া তারা গুলো কোনো তারা বা নক্ষত্র নয় বরং এগুলো পাথর। এদেরকে meteors বলা হয়।
Meteors এর নাম যখন চলেই আসলো তখন এটি সম্পর্কে একটু ধারণা দেই। মহাকাশে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে অনেকগুলো গ্রহ ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি অনেক পাথর মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। এদেরকে astroyet বলা হয়। এই astroyet আকৃতিতে গ্রহদের থেকে ছোট হয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যখন সোলার সিস্টেম তৈরি হয়েছিল যখন সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ তৈরি হয়েছিল তখন কিছু পাথর মহাশূন্যে এভাবেই ভেসে বেড়াচ্ছিল যা কিনা আজো সূর্যের চারদিকে এভাবেই ভেসে বেড়াচ্ছে। আর এদেরকেই astroyet বলা হয়। এই astroyet গুলো ভেসে বেড়ানোর সময় যখন নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে ধাক্কা খায় তখন এরা ছোট ছোট টুকরোয় পরিনত হয়। যদি এরা পৃথিবীর নিকটে অবস্থান করে তখন এরা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে। এরা খুব দ্রুত গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে। এদের গতি ৭০কিমি পার সেকেন্ড বা এর চেয়ে বেশি ও হয়ে থাকে। যখন এই পাথরের টুকরো গুলো আমাদের atmosphere এ প্রবেশ করে তখন এদের দ্রুত গতির কারনে এরা আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাথে ঘর্ষণ খায়। এরপর এই পাথর এতোটাই গরম হয়ে যায় যে এতে আগুন ধরে জ্বলতে শুরু করে। আর এটাকেই meteor বলা হয়। যাকে আমরা উল্কা বা নক্ষত্র পতন বলে থাকি।
সেই পাথরের টুকরো যাকে astroyet থেকে আলাদা হয়ে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছিল তাকে meteorite বলা হয়। কিন্তু যখন এই পাথর আমাদের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে বায়ুমন্ডলের তাপের প্রভাবে জ্বলতে শুরু করে তখন তাকে meteor বলা হয়। আমার একেই খসে পড়া তারা বা নক্ষত্র পতন বলে থাকি।
এরপর যখন কোনো meteor জ্বলতে জ্বলতে নিঃশেষ না হয়ে আমাদের ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় তখন তাকে meteorite বলা হয়। এই meteorite খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে। বিজ্ঞানীরা এর ওপর research করেন। এই meteorite থেকে তারা আমাদের Universe ও সোলার সিস্টেম সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন।
নাসার মতে প্রতিদিন আমাদের পৃথিবীতে ৪৪ হাজার meteorite পতিত হয়। বেশিরভাগ meteorite একটি ছোট কঙ্কর এর মতোই হয়। তাই এটি কখন ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় তা বুঝা যায় না। তবে কিছু কিছু meteorite অনেক বড় আকৃতির হয়ে থাকে। ৫০ হাজার বছর আগে এরিজোনা তে একটি ধাতুর meteorite পতিত হয়েছিল। যা ৫০ মিটার চওড়া ছিল। সেই meteorite সেই জায়গায় প্রায় ১কিমি গভীর গর্ত করে দিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে ৬০০ থেকে ৬৫০ কোটি বছর আগে অনেক বড় একটি astroyet পতিত হয়েছিল। এর ফলে ডাইনোসর ও অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী পুরো পুরি বিলীন হয়ে গিয়েছিল।
পৃথিবীতে মাঝে মধ্যে meteor এর বৃষ্টি দেখতে পারেন। বৃষ্টি এজন্য বললাম কারণ অনেক গুলো meteor একসাথে পতিত হয়, আর একে meteor shower বলা হয়। রাতের আকাশে ঘন্টায় এক ডজন থেকে ১০০ টি meteor দেখতে পেতে পারেন। কিন্তু বৃষ্টির মতো পতিত হওয়া meteor গুলো কিছু টা আলাদা হয়। এই meteor গুলো astroyet থেকে নয় বরং ধূমকেতুর থেকে পতিত হয়। ধূমকেতু astroyet এর মতোই তবে কিছু টা আলাদা।
Astroyet পাথরের ধাতু দিয়ে তৈরি যার ভিতরে কিছু টা বরফ থাকে। কিন্তু ধূমকেতুর মধ্যে বরফ এবং পাথরের অনুপাত সমান থাকে। সেখানে সঞ্চিত বরফ সূর্যের তাপে গ্যাসে পরিনত হয়। এজন্য ধূমকেতুর ভিতরে সবসময় গ্যাসে পরিপূর্ণ থাকে। এবং একে ধোঁয়ার মতো দেখায়। বিভিন্ন ধূমকেতু পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলাচল করে আর এর ছোট ছোট টুকরো মহাশূন্যে অনেক সময় ধরে ভেসে থাকতে পারে। তবে যখন এই টুকরো গুলো পৃথিবীর নিকটবর্তী হয় এগুলো পৃথিবীতে পতিত হয়। আর প্রতিটি টুকরো meteor হয়ে যায়, একেই meteor shower বলা হয়।