কোনো কার্পণ্য নয় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে

গোটা দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বালুখেকোরা। তঁাদের দৌরাত্ম্যে বহুমুখী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নদ-নদী ও এ-সংলগ্ন জনপদগুলোর। বেআইনিভাবে অবাধে বালু তোলার কারণে নদীভাঙন হচ্ছে। বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি হারাচ্ছে, কোথাও কোথাও উদ্বাস্তু হচ্ছে। কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বালু তোলা নিয়ে বিরোধে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠছে বালুসন্ত্রাসী গোষ্ঠী। অনেক জায়গায় আমরা দেখি স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কিছু করতে পারে না। এ ছাড়া খননযন্ত্র আর পাইপ জব্দ করেও বালুখেকোদের থামানো যায় না। কারণ, খননযন্ত্র ও পাইপের খরচ এক দিনের তোলা বালু বিক্রি করেই পুষিয়ে নেওয়া যায়। সম্প্রতি নাটোরের লালপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর দুর্গম চরে বালুসন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নির্বিঘ্নে বালু তুলতে গুলি চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পদ্মার চরের কুখ্যাত পান্না বাহিনীর নেতা কাকন আলী ওরফে ইঞ্জিনিয়ারের ছত্রচ্ছায়ায় কিছু বালুসন্ত্রাসী সেখানে বালু উত্তোলন করছে। সম্প্রতি লালপুরের লক্ষ্মীপুর পদ্মাঘাটের পাশে ভূগর্ভস্থ বালু তোলার জন্য যন্ত্র স্থাপন করে তারা। বালু তোলা হলে আশপাশের কৃষিজমি বিলীন হবে—এমন আশঙ্কা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাধা দেন। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পান্না বাহিনীকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনকে ভয় দেখাতে সন্ত্রাসীরা দুই দফা ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

পান্না বাহিনীর দৌরাত্ম্যে ওই এলাকায় যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা বালু উত্তোলনকারীদের তৎপরতা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এসেছেন। এলাকাটি নৌ পুলিশের আওতাধীন। গুলি চালানোর ঘটনা নৌ পুলিশ তদন্ত করছে। লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা সুলতানা বলেন, ‘বালুসন্ত্রাসীরা যত হুমকিই দিক, তাদের প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাটোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী—এ চার জেলার সীমান্তে দুর্গম চর হওয়া এলাকাটিতে পান্না বাহিনী আধিপত্য বিস্তার করেছে। খামারিদের পশু ছিনিয়ে নেওয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালাচ্ছে। নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডও তারা ঘটাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে তারা। পান্না বাহিনীর এ অপতৎপরতা সম্পর্কে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওয়াকিবহাল বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আশা করব, দ্রুত ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পান্না বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। নদী রক্ষায় ও কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কোনো কার্পণ্য হবে না, সেটিই কাম্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *