ঐতিহাসিক মসলিন শাড়ি আবারও বাংলাদেশে
বাজারে আসছে আবারো আদি মসলিম শাড়ি ।এটি আগের মসলিম শাড়ির চেয়েও অনেক মিহি একটি আংটিতে দুইটি শাড়ি অনায়াসেই বের হয়ে আসে। মসলিম সুতা ও কাপড় তৈরির নতুন উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তা হলেন বাংলাদেশের মোঃ আইয়ুব আলী ।যেখানে আদি মসলিম শাড়ি একটি আংটির ভিতরে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। সেইখানে নতুন তৈরি দুইটি মসলিম শাড়ি একটি আংটির ভিতরে অনায়াসে যেতে পারে। এতটা উন্নত মানের এই মসলিম শাড়ি তৈরি হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে।
যেভাবে এই মসলিম শাড়িটি তৈরি করা হয়
প্রথমে চরকা ঘুড়িয়ে কারিগরিগন বিশেষ তুলা থেকে বিশেষ্ভাবে তৈরি করে থাকেন । এসব কারিগর এতটাই দক্ষ যে তারা আড়াই গ্রাম তুলা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার সুতা তৈরি করেন। তারা যে পরিমাণ সুতা তৈরি করছে আড়াই গ্রাম তুলা থেকে তা দিয়ে প্রায় একটি ফুটবল মাঠকে পাঁচবার প্যাঁচানো সম্ভব।এমন সুতা কাটা চারটি খানি কথা নয় থাকতে হয় বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতা । যখন তুলা থেকে কারিগরগণ সুতা তৈরি করেন তখন থাকতে হয় বিশেষ মনোযোগ। একটু মনোযোগ এদিক ওদিক হলেই সুতা মোটা হয়ে যাবে যা দিয়ে আর শাড়ি বানানো সম্ভব হবে না। এই সুতা তৈরি প্রক্রিয়াতে কারিগণ বাম ও ডান দুই হাতকে কাজে লাগিয়ে থাকেন।এত যত্ন করে তৈরি করা এই সুতাটা তাঁতিদের হাতে যেন নিজেদের সন্তানের মতই।
মসলিন শাড়ির ইতিহাস
আগে এই মসলিন শাড়ি বাংলার তাঁতিরা অনেক যত্ন সহকারে তৈরি করতেন। কিন্তু ইংরেজরা এদেশে আসার পর থেকেই বাঙ্গালীদের উপর নানা অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে দেন।তারা বাংলার কৃষকদের দিয়ে জোরপূর্বক নীল চাষ করা ও বেশি বেশি কর আদায় করতো। তাদের এসব অত্যাচার এতটাই কষ্টকর ছিল যে, এতে অনেক কৃষক মারাও যেতেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মুসলিম শাড়ি ও কাপড় তৈরি করে কৃষকরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ভাত পানি যোগাড় করতেন। কিন্তু এটা তেও ছিল ইংরেজদের অনেক বাধা নিষেধ। তারা দেখলেন মসলিম শাড়ি বাংলা ছাড়াও অন্যান্য দেশে অনেক জনপ্রিয় এবং কি এসব শাড়ি কাপড় বিক্রি করে তারা বেশি লাভবান হতে পারবেন তাই তারা মুসলিম শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। তারা কৃষকদের মসলিম বুনতে বাধা প্রদান করতেন। যেসব কৃষক তাদের বাধা-বিপত্তি না মেনে মুসলিম সারি তৈরি করে তাদের হাতের আঙ্গুল কেটে নেওয়া হতো কতটাই না বেদনাদায়ক ছিল সেই দিনগুলো ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এখন আবার সেই আদি মুসলিম শাড়ি আমাদের বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। যদিও বেসরকারিভাবে তবুও এটি বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নতির ধাপ হিসেবে ধরা দিতে পারে। এই মুসলিম শাড়ি বৈদেশিক ভাবে বাণিজ্য করে বাংলাদেশের মানুষ লাভবান হতে পারে।এমনকি এই মসলিম শাড়ি এতটা উন্নত যে সহজে শাড়ি বা কাপড় নষ্ট হয় না,তাই দীর্ঘদিন ধরে এই শাড়ি ব্যবহার করা যায়।আর এই শাড়ি এতটাই চাহিদা সম্পন্ন যে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের মানুষরা এই শাড়ি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। তাই বাংলাদেশের বাণিজ্য কে উজ্জ্বল করতে এই শাড়ির বিকল্প নেই।সরকারের উচিত এই শাড়িকে সরকারি ভাবে উৎপাদন শুরু করা ও বেসরকারিভাবে যে উৎপাদন গুলো হচ্ছে,সেগুলোতে যথাযথ সাহায্য ও অর্থ প্রদান করাযাতে আমাদের এই ঐতিহ্য হারিয়ে না যায়।আমাদের এই ইতিহাস ঐতিহ্য আমাদেরই অংশ এগুলোকে ধরে রাখাই আমাদের কর্তব্য।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড যা বলেছে
এই শাড়ির বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে ও প্রাইভেট খাত গুলোতে এর উৎপাদন খরচ টা কমে যাবে এবং সরকারিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হবে।ঐতিহ্য ও অহংকারের এই কাপড় বেসরকারি পর্যায়ে যেহেতু তৈরি হচ্ছে,তাই গুণমান যেচে দেখবেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা এসব কাপড় গুলোর গুণগত মান যাচাই করবেন এবং তাদের যাচাইয়ের পরেই তা বাজারে অথবা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হবে। জনগণ যাতে প্রতারিত না হয় সেদিকেও তারা লক্ষ্য রাখবেন।